
জামাত শিবির অর্থ কি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন এই দলের উদ্দেশ্য।দলটি ইকামতে দ্বীন (ইসলাম প্রতিষ্ঠা) নামক মতাদর্শকে মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং একে “রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা” অর্থে দলীয় ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।এটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড (ইখওয়ানুল মুসলিমিন)-এর আদর্শ ধারণ করে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায় দেয়। যা সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত স্বৈরাচার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। তারপর ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।

জামাত শিবির অর্থ কি
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আল-কায়দা নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত বিদেশী এনজিও যেমন, সৌদি আরবের আল হারমেইন ফাউন্ডেশন, কুয়েত ভিত্তিক রিভাইবাল ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি নামক সংগঠনসমূহকে বাংলাদেশে তাদের শাখা স্থাপনের অনুমতি প্রদান করলে তারা দেশে জিহাদী কর্মকান্ডের জন্য অর্থ আনয়ন শুরু জোরদার করে। তথ্য মতে ২০০৫ সাল নাগাদ ১২৫ টি এনজিও বাংলাদেশে এনজিও’র নামে জঙ্গি তৎপরতা অথবা জঙ্গি কর্মকান্ডের উদেশ্যে অর্থ ব্যয় করে। তাদের এ আদর্শ মওদুদীবাদ অথবা জামায়াতে ইসলামী অথবা আইএসআই’র ওহাবিজম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়(জড়ু ২০০৯) । জামায়াত মূলত রাজনৈতিক সংযোগ হিসেবে ইরান ও পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের কাছ থেকে। জামায়াত বিশ্বাসী করে গণতন্ত্র ইসলাম বিরোধী এবং এ কারণে বাংলাদেশের অস্তিত্ব পাকিস্তান ও জামায়াতের নিকট স¦ীকৃত নয়। জামায়াত পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র নিকট হতে বিপুল অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে। জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম স্পন্সর হচ্ছে সৌদি ব্যবসায়ী ইয়াছিন কাদিরের শ্যালক শেখ আহম্মেদ সালাহ জামজুল। তিনি ছিলেন সৌদি আরবের সাবেক অর্থমন্ত্রী। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে এ ব্যাংকটিকে অভিযুক্ত করা হয়। ব্যাংকটি জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে বিনিয়োগসহ দাওয়াতী কার্যক্রম ও ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। জামায়াত ইসলামী ব্যাংকিং এর নামে দেশে অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেছে। যার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। যেমন ফয়সাল ইনভেষ্টমেন্ট ফাউন্ডেশন (এফআইএফ) নামে একটি ব্যাংক যার বৈধ অনুমোদন না থাকা সত্বেও পরিচালনা করে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান হলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। ব্যাংকটিতে জামায়াতের প্রভাব থাকায় অবৈধ ব্যাংকিং পরিচালনা সত্বেও এর বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি (প্রথম আলো ১৬ জুলাই ২০০৯)। এছাড়া শিবির দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকুরী প্রার্থীদের নিকট কোচিং ব্যবসা পরিচালনা ও গাইড বিক্রয়ের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে থাকে। সূত্র মতে বিদেশে বিভিন্ন উগ্র পন্থী সংগঠনের নিকট হতে জামায়াতে ইসলামী পক্ষে অর্থ সংগ্রহ করে। জামায়াত নেতা মঈন উদ্দিন খাঁন ও আশরাফুজ্জামান এরা দুজনেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। তারা লেবাননের জঙ্গি সংগঠন জামেয়া ইসলামিয়া, সৌদি আরব ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি ইয়ুথ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক মুসলিম এইড, আল-খিদমত ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের নিকট হতে ইসলামী ব্যাংক লি: বাংলাদেশের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে থাকে। যুদ্ধাপরাধী মঈন উদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খান তারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানীও হতে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। আল-খিদমত সংগঠনটি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও জামায়াতের সামরিক শাখাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এছাড়া আল খিদমত পাকিস্তানের ক্ষমা করে দেয়া আল কায়দা গেরিলাকেও পুনর্বাসনে সহায়তা করেছে ( Blackburn, ২০০৬)। অন্য দিকে জামাত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা দেশে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানী নেটওয়ার্কের সাথে ও সম্পৃক্ত। জামাত শিবিরের সহযোগিতায় অস্ত্র চোরা চালানী ও সন্ত্রাসী বাহিনী বাংলাদেশের কক্সবাজার হয়ে দেশে ও দেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের নিকট অস্ত্র বেচা-কেনার মাধ্যমে জামাত-শিবির বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।
সাংগঠনিক কাঠামো
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
- কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য)
- আমীরে জামায়াত
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ
- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ।
অঙ্গ সংগঠন
- যুব সংগঠন – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগ
- মহিলা সংগঠন – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ
- ওলামা সংগঠন – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওলামা বিভাগ
- সমাজ কল্যান সংগঠন – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাজকল্যাণ বিভাগ
- পেশাজীবী সংগঠন – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবী বিভাগ
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের (২০২৩-২০২৫) কার্যকালের সদস্যগণ।
আমীর
ডা. শফিকুর রহমান
নায়েবে আমীর
- অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
- ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
- মাওলানা আ.ন.ম. শামসুল ইসলাম
- সেক্রেটারি জেনারেল
- অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
- মাওলানা এ.টি.এম. মাছুম
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরআনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা তথা শরিয়াহ আইন প্রবর্তন করা।
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল প্রদর্শিত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে।
ইসলামি পণ্ডিতদের দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর ভূমিকা মূল্যায়ন করে, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন:
জামাআতে ইসলামী উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামি রাজনৈতিক দল। দলটি বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: তারা প্রমাণ করেছে যে ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান, এটি একটি বাস্তব ব্যবস্থা, এবং এটি সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা; তারা নিজেদেরকে যুবক-যুবতীদের এবং শিক্ষিত লোকদেরকে ইসলাম সম্পর্কে এই সত্যগুলি বোঝার জন্য সক্ষম করেছে, তারা মূলত ইসলামি অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে; তারা সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, যেমন ব্যক্তি, পীর, কবর পূজার বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সফল হয়েছে।