রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া ২০২৫

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর ২৩ মার্চ থেকে শুরু হবে পবিত্র রমজান। চলবে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। এই পুরো এক মাস পালিত হবে রোজা। ইবাদতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রোজার সময় সেহরি ও ইফতার রোজাদারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া ২০২৫
ইসলামের নিয়মানুযায়ী রমজানে প্রতিটি সুস্থ-সবল মানুষের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। তাই ফজরের আগে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা শুরু করতে হয় এবং সন্ধ্যায় ইফতারের মাধ্যমে দিনের রোজার সমাপ্তি ঘটে। এই দুটি সময়ে কিন্তু নিয়ত এবং দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হয়, আবার ইফতারের আগে দোয়া করে ইফতার শুরু করতে হয়।
বাংলায় সেহরির নিয়ত জানুন
সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হয়। রোজা রাখার আরবি নিয়ত: نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
এর বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় অর্থ: হে আল্লাহ, আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসে তোমার পক্ষ থেকে ফরজ করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
বাংলায় নিয়ত: হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার পক্ষ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।
ইফতারের দোয়া
ইফতারের আগে ইফতার সামনে নিয়ে এই দোয়া পড়তে হয়: بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতারের বাংলা নিয়ত: হে আল্লাহ, আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমজানের ফরজ রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনে রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার শুরু করছি। তারপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার করা।
রোজার নিয়ত কখন কীভাবে করবেন?
রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন, মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (সহিহ বোখারি : ১/২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬)।
ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (সহিহ বোখারি : ২০০৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়, বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। (সহিহ বোখারি : ১/২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।
রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। (সুরা বাকারা : ১৮৭)।
নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন, মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিস শরিফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৩৪৩, রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৭)।
ফজরের আজানের কতক্ষণ আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়?
সালাত বা নামাজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয়। এটি অন্যতম ফরজ ইবাদত। পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজের কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা সালাত (নামাজ) পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে, তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)
এ ক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম নফল ইবাদত। এর ফজিলত ও সওয়াবও অনেক। আবু বিশর জাফর ইবনু আবু ওয়াহশিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো তাহাজ্জুদের সালাত। আর রমজানের সাওমের (রোজা) পর সর্বোত্তম সাওম হলো মুহররম মাসের সাওম। (সুনান-আন-নাসায়ী, হাদিস: ১৬১৭)
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তা’য়ালা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন- কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছ এমন যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দেবো। কে আছ এমন আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করবো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৭৯)
কেউ যদি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে চায়, সে ক্ষেত্রে তাকে এশার ফরজ ও সুন্নত আদায়ের পর বিতরের নামাজ বাকি রাখতে হবে। পরবর্তীতে তাহাজ্জুদ আদায়ের পর বিতরের নামাজ পড়তে হয়। তবে প্রশ্ন হলো- ফজরের আজানের কতক্ষণ আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়?
এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। হাদিসে এসেছে, ইবনু ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সুবহে সাদিকের সঙ্গে সঙ্গে রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) ও বিতরের ওয়াক্ত চলে যায়। সুতরাং তোমরা সুবহে সাদিকের পূর্বেই বিতর আদায় করে নেবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৪৬৯)
উল্লেখ্য, রাতের শেষদিকে পূর্ব দিগন্তের উভয় দিকে ক্ষীণ (দিগন্তের সাথে ভার্টিক্যালি) প্রশস্ত আকারে যে আলো প্রকাশ পায় তাকেই মূলত সুবহে সাদিক বলা হয়। এই সময় থেকে সাহরির সময় শেষ হয়ে যায় এবং এরপর থেকেই ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়।