Bangla News Today

সবুজ বিপ্লব

Green Revolution

সবুজ বিপ্লব

সবুজ বিপ্লব বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার এবং সেচের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে গম, ধান, ভুট্টা প্রভৃতির উৎপাদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতি দ্রুত যে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে ‘সবুজ বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে বিপ্লব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুত পরিবর্তন অর্থে। এ পরিবর্তন এসেছে প্রচলিত পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে অধিক উৎপাদনক্ষম নতুন প্রযুক্তির চাষাবাদে রূপান্তরের মাধ্যমে। এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে নিরবে-নিভৃতে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্যে। বাংলাদেশে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়েছে ষাট-এর দশকে। তবে এর ব্যাপকতা এসেছে অনেক বিলম্বে, স্বাধীনতার পরে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, বর্তমানে ২০২5 সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ১০ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। তা কেবল সম্ভব হয়েছে সবুজ বিপ্লবের কারণে। উপরোক্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে, গত প্রায় ৪ দশকে দেশের খাদ্যোৎপাদন প্রায় ৩ গুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভবরতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছে। এভাবে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বকে ক্ষুধার হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে সবুজ বিপ্লব। সবুজ বিপ্লব আরম্ভের প্রাক্কালে বাংলাদেশের কৃষক কদাচিৎ উন্নতমানের সার, কীটনাশক এবং আধুনিক সেচযন্ত্র ব্যবহার করত। অধিকাংশ কৃষক হাজার বছরের পুরানো চিরায়ত পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করত। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ সেচ সুবিধা ও পানি নিষ্কাষণ পদ্ধতি প্রভৃতি প্রবর্তন করে। অতঃপর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নত জাতের গম ও ধানের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচ সুবিধা কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণের মাধ্যমে এদেশে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়। বর্তমানে ধান, গম ও ভুট্টাসহ অন্যান্য শস্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ও ধারণে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

সবুজ বিপ্লব
সবুজ বিপ্লব

Green Revolution

সবুজ বিপ্লবের সুফলঃ

১. ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিঃ রাসায়নিক সার, কীটনাশক, উচ্চফলনশীল বীজ প্রভৃতি ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন অদ্ভূতপূর্ব বৃদ্ধি পায়।

২. কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিঃ প্রচুর পরিমান ফসল উদবৃত্ত হওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে কৃষকদের আয় হয়, যা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

৩. বহু ফসলি কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আগে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে ফসল ফলাতে হত বলে বছরে একবার বীনার ফসল উৎপাদন হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়, সেই জমিতে বছরে দুই থেকে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই ফসলের উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসঃ নদী থেকে অসংখ্য খাল কেটে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো হয়। ফলে জমিতে সময় মতো প্রয়োজন অনুসারে জল সরবরাহ করা সম্ভব হয় । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করতে হয় না।

৫. অনাহারের পরিমান হ্রাসঃ সবুজ বিপ্লবের পূর্বে বাংলাদেশের বহু মানুষকে খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকতে হত। সবুজ বিপ্লবের ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়, যার দ্বারা দেশের প্রায় সকল মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
৬. দেশের আর্থিক উপার্জন বৃদ্ধিঃ উদ্বৃত্ত ফসল বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, যা দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

Green Revolution

ঈদে টানা ৯ দিন সরকারি ছুটি

Facebook Page Link 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button